তৎসম স্বরসন্ধি

- বাংলা - বাংলা ভাষা (ব্যাকরণ) | | NCTB BOOK
2

তৎসম শব্দের স্বরসন্ধি:

স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনের নাম স্বরসন্ধি ।

১. অ-কার কিংবা আ-কারের পর অ-কার কিংবা আ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়, আ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন—

অ + অ আ নর+ অধম = নরাধম। এরূপ-হিমাচল, প্রাণাধিক, হস্তান্তর, হিতাহিত ইত্যাদি। =

অ + আ আহিম + আলয় = হিমালয়। এরূপ - দেবালয়, রত্নাকর, = সিংহাসন ইত্যাদি। আ + অ আ যথা + অর্থ = যথার্থ। এরূপ – আশাতীত, কথামৃত, মহার্ঘ ইত্যাদি ।

=আ + আ আ বিদ্যা+ আলয় = বিদ্যালয়। এরূপ- কারাগার, মহাশয়, সদানন্দ ইত্যাদি।

২. অ-কার কিংবা আ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ-কার হয়; এ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন—

অ + ই = এ শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা।

আ + ই =এ যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট।

অ + ঈ=এ  পরম + ঈশ =পরমেশ।

আ + ঈ =এ মহা + ঈশ =মহেশ ।

এরূপ –পূর্ণেন্দু, শ্রবণেন্দ্রিয়, স্বেচ্ছা, নরেশ, রমেশ, নরেন্দ্র ইত্যাদি।

৩. অ-কার কিংবা আ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয়; ও-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনে যুক্ত হয়। যেমন-

অ + উ সূর্য + উদয় = সূর্যোদয় ।

আ + উ = যথা + উচিত যথোচিত।

অ + ঊ =ও গৃহ + ঊর্ধ্ব = গৃহো ।

আ + ঊ = গঙ্গা + ঊর্মি = গঙ্গোর্মি।

এরূপ – নীলোৎপল, চলোর্মি, মহোৎসব, নবোঢ়া, ফলোদয়, যথোপযুক্ত, হিতোপদেশ, পরোপকার, প্রশ্নোত্তর ইত্যাদি ৷

8. অ-কার কিংবা আ-কারের পর ঋ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ‘অর’ হয় এবং তা রেফ (´ ) রূপে পরবর্তী বর্ণের সাথে লেখা হয়। যেমন—

অ + ঋ =অর্ দেব + ঋষি = দেবর্ষি । 

আ + ঋ = অর্ মহা + ঋষি = মহর্ষি

এরূপ – অধমর্ণ, উত্তমর্ণ, সপ্তর্ষি, রাজর্ষি ইত্যাদি।

৫. অ-কার কিংবা আ-কারের পর “ঋত’-শব্দ থাকলে (অ, আ+ঋ) উভয় মিলে ‘আর’ হয় এবং বানানে পূর্ববর্তী বর্ণে আ ও পরবর্তী বর্ণে রেফ লেখা হয়। যেমন—

অ + ঋ= আর শীত + ঋত = = শীতার্ত।

আ + ঋ = আর তৃষ্ণা + ঋত = তৃষ্ণার্ত।

এরূপ –ভয়ার্ত, ক্ষুধার্ত ইত্যাদি।

৬. অ-কার কিংবা আ-কারের পর এ-কার কিংবা ঐ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঐ-কার হয়; ঐ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—

অ + এ = ঐ জন + এক জনৈক। 

আ + এ= ঐ  সদা + এব = সদৈব।

অ + ঐ=ঐ  মত + ঐক্য = মতৈক্য।

আ + ঐ = ঐ  মহা + ঐশ্বর্য মহৈশ্বৰ্য ৷

এরূপ— হিতৈষী, সর্বৈব, অতুলৈশ্বর্য ইত্যাদি।

৭. অ-কার কিংবা আ-কারের পর ও-কার কিংবা ঔ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঔ-কার হয়; ঔ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন-

বন + ওষধি বনৌষধি ৷

অ + ও =মহা + ওষধি মহৌষধি ।

আ + ও = ঔ

অ + ঔ =ঔ  পরম + ঔষধ =পরমৌষধ।

আ + ঔ =ঔ মহা + ঔষধ = মহৌষধ ।

৮. ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে দীর্ঘ ঈ-কার হয়। দীর্ঘ ঈ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন-

ই + ই =ঈ  অতি + ইত = অতীত

ই + ঈ =ঈ  পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা ৷

ঈ + ই= ঈ সতী + ইন্দ্ৰ = সতীন্দ্র ।

ঈ + ঈ =ঈ  সতী + ঈশ = সতীশ ৷

এরূপ— গিরীন্দ্র, ক্ষিতীশ, মহীন্দ্র, শ্রীশ, পৃথ্বীশ, অতীব, প্রতীক্ষা, প্রতীত, রবীন্দ্র, দিল্লীশ্বর ইত্যাদি।

৯. ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই ও ঈ ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে ই বা ঈ স্থানে ‘য’ বা য(j) ফলা হয়। য-ফলা লেখার সময় পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে লেখা হয়। যেমন—

ই + অ = য্ + অ অতি + অন্ত = অত্যন্ত।

ই + আ = ষ্ + আ ইতি + আদি = ইত্যাদি ।

ই + উ = ব্ + উ অতি + উক্তি অত্যুক্তি।

ই + ঊ = য্ + ঊ প্ৰতি + ঊষ = প্রত্যূষ।

ঈ+ আ = য্ + আ মসী + আধার = মস্যাধার।

ই + এ= ব্ + এ  প্রতি + এক =প্রত্যেক ।

ঈ + অ = য্ + অ নদী + অম্বু = নদ্যম্বু।

এরূপ-প্রত্যহ, অত্যধিক, গত্যন্তর, প্রত্যাশা, প্রত্যাবর্তন, আদ্যন্ত, যদ্যপি, অভ্যুত্থান, অত্যাশ্চর্য, প্রত্যুপকার ইত্যাদি।

১০. উ-কার কিংবা ঊ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঊ-কার হয়; ঊ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জন ধ্বনির সাথে যুক্ত হয়। যেমন—

উ + উ = ঊ মরু + উদ্যান = মরূদ্যান ।

উ + ঊ= উ = বহু + ঊর্ধ্ব = বহূর্ধ্ব।

উ + উ= উ বধূ + উৎসব = বধূৎসব।

উ+ উ=উ  ভূ + ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব।

১১. উ-কার কিংবা উ-কারের পর উ-কার ও ঊ-কার ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে উ বা ঊ স্থানে ব-ফলা হয় এবং লেখার সময় ব-ফলা পূর্ববর্তী বর্ণের সাথে লেখা হয়। যেমন-

উ + অ = ব + অ    সু + অল্প = স্বল্প ।

উ + আ = ব + আ     সু + আগত = স্বাগত ।

উ + ই = ব + ই   অনু + ইত = অন্বিত ।

উ + ঈ = ব + ঈ  তনু + ঈ=তন্বী ৷

উ + এ = ব + এ   অনু + এষণ = অন্বেষণ ।

এরূপ- পশ্বধম, পশ্বাচার, অন্বয়, মন্বন্তর ইত্যাদি।

১২. ঋ-কারের পর ঋ ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে ‘ঋ’ স্থানে ‘র’ হয় এবং তা র-ফলা রূপে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন - - পিতৃ + আলয় = পিত্রালয়, পিতৃ + আদেশ = পিত্রাদেশ ।

১৩. এ, ঐ, ও, ঔ-কারের পর এ, ঐ স্থানে যথাক্রমে অয়, আয় এবং ও, ঔ স্থানে যথাক্রমে অব্ ও আব্

হয়। যেমন-

এ + অ = অয়্ + অ নে + অন = নয়ন। শে + অন = শয়ন ।

ঐ + অ = আহ্ + অ নৈ + অক = নায়ক। গৈ + অক গায়ক।

ও + অ = অব্ + অ পো + অন = পবন। লো + অন = লবণ।

 ঔ + অ = আব্ + অ  পৌ + অক=পাবক ।

ও + আ = অব্ + আ গো + আদি = গবাদি ।

ও + এ = অব্ + এ গো + এষণা = গবেষণা।

ও + ই = অব্ + ই    পো + ইত্ৰ = পবিত্ৰ ৷

ঔ + ই = আব্ + ই নৌ + ইক = নাবিক ।

ঔ + উ = আব্ + উ  ভৌ + উক = ভাবুক ।

১৪. কতগুলো সন্ধি কোনো নিয়ম অনুসারে হয় না, এগুলোকে নিপাতনে সিদ্ধ বলে। যথা – কুল + অটা - = কুলটা (কুলাটা নয়), গো + অক্ষ = গবাক্ষ (গবক্ষ নয়), প্র + ঊঢ় = প্রৌঢ় (প্রোঢ় নয়), অন্য + অন্য = অন্যান্য, মার্ত + অণ্ড = মার্তণ্ড, শুদ্ধ + ওদন = শুদ্ধোদন।

Content added || updated By
Promotion